সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০২ পূর্বাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অর্ধশত মানুষকে হত্যার দায়ে শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী ব্রেন্টন ট্যারেন্টকে বাকি জীবন কাটাতে হবে জেলে।
প্রায় দেড় বছর আগের ওই হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করে বৃহস্পতিবার নিউ জিল্যান্ডের আদালত বলেছে, ব্রেন্টন ট্যারেন্ট যা করেছেন, তা ‘মানুষের কাজ নয়’।
২৯ বছর বয়সী এই অস্ট্রেলিয়ার নাগরিককে প্যারোলে মুক্তির সুযোগ না রেখে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক, যা নিউ জিল্যান্ডের আইনে সর্বোচ্চ সাজা।
দেশটির ইতিহাসে এই প্রথম কাউকে এ শাস্তি দেওয়া হল বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এ মামলায় দুটি মসজিদে গুলি চালিয়ে ৫১ জনকে হত্যা, ৪০ জনকে হত্যাচেষ্টা এবং সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনা হয়েছিল ব্রেন্টন ট্যারেন্টের বিরুদ্ধে। আদালতে সব দায় স্বীকার করে নেন তিনি।
এই উগ্রবাদী ২০১৯ সালের মার্চে ক্রাইস্টচার্চে হামলার ঘটনাটি ফেইসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করেছিলেন। তৃতীয় আরেকটি মসজিদে হামলা চালানোর পরিকল্পনাও তার ছিল। মসজিদগুলো পুড়িয়ে দিতে এবং ‘যত বেশি লোককে সম্ভব’ তিনি হত্যা করতে চেয়েছিলেন বলে উঠে আসে এ মামলার বিচারে।
ক্রাইস্টচার্চের উচ্চ আদালতের বিচারক ক্যামেরন মান্ডার বলেছেন, সীমাবদ্ধ মেয়াদের সাজা যথেষ্ট হবে না।
“তবে আপনার অপরাধ এতই জঘন্য যে মৃত্যু পর্যন্ত আপনাকে আটক করে রাখা হলেও শাস্তি ও নিন্দার প্রয়োজনীয়তাগুলো নিঃশেষ হয়ে যাবে না,” রায় ঘোষণা করে বলেন বিচারক।
“এ পর্যন্ত আমি যতটুকু দেখেছি তাতে আপনার কৃতকর্মের জন্য আপনার মধ্যে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই বলে উপলব্ধি করেছি,” বলেছেন তিনি।
কয়েদির ধুসর রংয়ের পোশাক পরা, রক্ষীদের ঘেরাওয়ের মধ্যে থাকা ট্যারেন্ট রায় ঘোষণার পর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি।
শুনানি চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে জানান, অভিবাসীদের দখলকারী হিসেবে বর্ণনা করে ট্যারেন্ট তাদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন আর উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সতর্কভাবে হামলার পরিকল্পনা করে যত বেশি সম্ভব লোককে হত্যা করতে চেষ্টা করেছিলেন।
শুনানিকালে কোনো আইনজীবী নিয়োগ না করে আদালতে ট্যারেন্ট নিজেই নিজের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন কিন্তু কিছু বলেননি। বৃহস্পতিবার একজন আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতকে তিনি জানান, কোনো প্যারোল ছাড়াই আমৃত্যু কারাদণ্ডের যে আবেদন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা করেছেন তার বিরোধিতা করবেন না তিনি।
বিচারক মান্ডার বলেন, “আপনার বিদ্বেষের কেন্দ্রে সমাজের বিশেষ সদস্যদের প্রতি যে ঘৃণা বিরাজমান তা নিয়ে তাদের হত্যা করতে আপনি এই দেশে এসেছিলেন, কিন্তু এখানে তার কোনো স্থান নেই- কোথাও তার কোনো স্থান নেই।”
রায় ঘোষণার আগে বিচারক ট্যারেন্টকে জিজ্ঞেস করেন তার কিছু বলার আছে কি না। তার কিছু বলার অধিকার আছে, সে বিষয়ে জ্ঞাত আছেন কিনা আদালতের এমন প্রশ্নে ট্যারেন্ট শুধু মাথা ঝাঁকান, কিন্তু কিছু বলেননি।
ট্যারেন্টের আগে নিউ জিল্যান্ডে শুধু উইলিয়াম বেল নামের তিন খুনের এক আসামী প্যারোল ছাড়া ৩০ বছরের কারাদণ্ড পেয়েছিলেন। এ পর্যন্ত দেশটিতে দেওয়া সবচেয়ে দীর্ঘতম মেয়াদের কারাদণ্ড সেটিই ছিল।